
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, কুষ্টিয়া |
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মিটন গ্রামে জমির উদ্দিন (৪৮) হত্যা মামলার পরবর্তী পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নিরীহ পরিবারের ওপর লাগাতার হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাঁরা এই ঘটনায় প্রশাসনের নীরবতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা জানান, জমির উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন আসামিকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা হলেও এলাকায় শান্তি ফেরেনি। বরং বিগত সরকার আমলের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় থাকা জাসদ সমর্থিত দুষ্কৃতকারীরা গ্রামজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রশাসনের সামনেই বাড়িঘরে হামলা, মালামাল লুট ও নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন কার্যত নিশ্চুপ।
গত ৩০ জুন দুপুরে মিরপুর উপজেলার মিটন ঈদগাহের সামনে পূর্বশত্রুতার জেরে জমির উদ্দিনকে বেধড়ক মারধর করেন আমলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি অনিক খান (২০) ও তাঁর সহযোগীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হাসান ইমাম জানান, নিহতের মাথা, বুক ও পায়ে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। নিহতের স্ত্রী জ্যোৎস্না খাতুন দাবি করেন, তার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এবং পারিবারিক প্রয়োজনেই তিনি বাইরে বের হয়েছিলেন। প্রায় দেড় বছর আগে অনিকের সঙ্গে একটি চায়ের দোকানে কথাকাটাকাটির ঘটনায় ঘটে যাওয়া থাপ্পড়ের প্রতিশোধ হিসেবেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই গ্রামে চলছে সহিংসতা। ভুক্তভোগীরা জানান, হামলাকারীরা বাড়িঘর ভাঙচুর করে খাবার, গরু-ছাগল, স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় কোটি টাকার সম্পদ লুটে নিয়েছে। নারীদের গলায় থাকা চেইন ও কানের দুল ছিঁড়ে নেওয়া অভিযোগ রয়েছে। এমনকি শ্লীলতাহানির চেষ্টাও চালিয়েছে তারা।
এতে আতঙ্কে অনেক পুরুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পুরো গ্রামে বিরাজ করছে চরম নিরাপত্তাহীনতা।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, প্রশাসন এ ঘটনায় যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে না বরং কিছু কর্মকর্তা ঘটনাটিকে ঘিরে অর্থ বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছেন। বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরও মামলা এজাহারভুক্ত করা হচ্ছে না বলে জানান তাঁরা।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও চলছে নানা বিতর্ক। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায় জানান, জমির উদ্দিন একসময় জাসদের কর্মী ছিলেন, যদিও পরিবার তা অস্বীকার করেছে। অপরদিকে, ছাত্রদলের স্থানীয় নেতারা অনিকের সংগঠনের পদ নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পর অনিকের বাড়িতে প্রতিপক্ষের লোকজন ভাঙচুর চালিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”
ভুক্তভোগীদের দাবি, সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন দ্রুত লুটপাট ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দায়েরকৃত অভিযোগগুলোকে এজাহারভুক্ত করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করেন। অন্যথায় তারা পরিবারসহ নিঃস্ব হয়ে পড়বেন এবং প্রশাসনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা আরও কমে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
একটি হত্যাকাণ্ডের পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও গ্রামবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসেনি। প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা এখন সময়ের দাবি। আইনের শাসন ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এই সহিংসতা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।