
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়া ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোতে আক্রমণ করতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জার্মানির প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল কার্সটেন ব্রয়্যার। জার্মানির প্রতিরক্ষা প্রধানের মতে, পশ্চিমা জোট ন্যাটোর সদস্যদের আগামী চার বছরের মধ্যে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সিঙ্গাপুরে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত একটি প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে শাংরি-লা ডায়ালগের ফাঁকে জেনারেল ব্রুয়ার বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
জেনারেল কার্স্টেন ব্রুয়ার বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া প্রতি বছর শত শত ট্যাঙ্ক তৈরি করছে, যার অনেকগুলো ২০২৯ সালের মধ্যে বা তারও আগে ন্যাটো বাল্টিক রাষ্ট্রের সদস্যদের উপর আক্রমণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়া উভয়ের মতামতের মধ্যে সম্প্রতি ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও, উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা ন্যাটো, ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
আর সেই জন্যই সদস্য দেশগুলোকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রবিবার (১ জুন) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
জেনারেল ব্রয়্যার আরও জানান, রাশিয়া বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ১৫০০টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক তৈরি করছে এবং তার একটি বড় অংশ শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য নয় বরং পশ্চিমা দিকের সামরিক কাঠামো ও মজুদেও যুক্ত হচ্ছে। ২০২৪ সালে দেশটি ১৫২ মিমি কামানের ৪০ লাখ গোলা তৈরি করেছে, যার সবই ইউক্রেনে পাঠানো হয়নি বলে জানান তিনি।
এ ধরনের প্রস্তুতি থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ২০২৯ সাল নাগাদ রাশিয়া ন্যাটোর বাল্টিক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর হামলা চালাতে পারে। তবে জেনারেল ব্রয়্যার বলেন, ‘এটা বলা যাবে না যে হামলা ২০২৯ সালের আগে হবে না। তাই আমাদের আজই প্রস্তুত থাকতে হবে।’
তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে সুয়ালকির গ্যাপ। এটি লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, রাশিয়া ও বেলারুশের সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল এবং একইসঙ্গে ন্যাটোর জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জার্মান প্রতিরক্ষা প্রধান আরও বলেন, ‘বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার একেবারে কাছাকাছি। আপনি সেখানে গেলে বুঝতে পারবেন, কী ভয়ের বাস্তবতা তারা অনুভব করছে।’
জেনারেল ব্রয়্যার বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে ন্যাটোর সঙ্গে বৃহত্তর সংঘর্ষের অংশ হিসেবে দেখছে, যেখানে তারা ন্যাটোর প্রতিরক্ষা লাইনে ফাঁক খুঁজে বের করতে চাচ্ছে এবং বারবার সেটা পরীক্ষা করে দেখছে।
এর প্রমাণ হিসেবে তিনি, বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে যাওয়া কেবল সংযোগে হামলা, ইউরোপের গণপরিবহনে সাইবার আক্রমণ এবং জার্মানির পাওয়ার প্লান্টের উপর দিয়ে অজ্ঞাত ড্রোনের উপস্থিতির মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করেন ।
হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার রাশিয়াপন্থি অবস্থানের পরও ন্যাটোর মধ্যে ঐক্য অটুট রয়েছে বলে দাবি করেন ব্রয়্যার। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া এই ঐক্যের উদাহরণ।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমার ৪০ বছরের সেনা জীবনে এমন ঐক্য আগে দেখিনি। সবাই বুঝে গেছে, সামনেই হুমকি এবং আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
নেদারল্যান্ডের হেগে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনের কয়েক সপ্তাহ আগে তার এই মন্তব্য এলো। সেক্ষেত্রে এবার অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি