
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, চাঁদপুর।
ভরা মৌসুমেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। যার ফলে চলতি মৌসুমে এক মাসে তিন দফা বেড়েছে ইলিশের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়তে বাড়তে এখন গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রয় হচ্ছে ইলিশ। এক সপ্তাহ আগে ছোট / মাঝারী সাইজের ইলিশ মণ প্রতি ৮০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন উঠে এসেছে ১লাখ ২০ টাকায়।
চলতি মৌসুমে ছোট সাইজের ইলিশ ১২’শ টাকা থেকে বেড়ে ১৬’শ আর এখন ২ হাজার টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ৮’শ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ১৫’শ টাকা থেকে বেড়ে ১৮’শ টাকা আর সেই ইলিশ এখন ২৫’শ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। গড়ে কেজিপ্রতি ২ হাজার টাকা নিচে মিলছে না কোন ইলিশ।
ইলিশঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, তৃতীয় দফায় কেজি প্রতি আরো ৫’শ থেকে ৮’শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম। এখন আকার ভেদে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা কেজি দর হাঁকাচ্ছে পাইকারী বিক্রেতারা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
ঘাটে মাছ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগেও এখান থেকে ইলিশ কিনেছি। দিন দিন মনে হচ্ছে ইলিশ সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হলে ইলিশের বাড়ির মানুষই খেতে পারবে না চাঁদপুরের ইলিশ।
ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ নেই। তাই ঘাটেও ইলিশের সরবরাহ কম। সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, গেল কয়েকদিন ধরে নোয়াখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরিশালের কয়েকটি এলাকা ও চাঁদপুরের চর এলাকা থেকে ঘাটে আসছে না জেলে ও ইলিশের বেপারীরা। আগে বেপারীদের কাছ থেকে মণ প্রতি ৮’শ টাকা ঘাটের টাকা নেয়া হতো। সেই টাকায় খরচা মেটানো সম্ভব নয়। এতে সমিতির সিদ্ধান্তনুযায়ী জুলাই থেকে শতকরা ৩ % কমিশন নেয়া হচ্ছে। আগে শতাধিক বেপারী আসলেও এখন ১০ থেকে ১৫ জন ইলিশের বেপারীরা স্বল্প ইলিশ নিয়ে ঘাটে আসছে। জেলেরা নদীতে মাছ পাচ্ছে না বলেও দাবী তাদের মৎস্য বণিক সমিতির।
চাঁদপুরের পাশাপাশি বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আরও অনেক সাগর তীরবর্তী জেলায় ইলিশ ধরা পড়ে থাকে। নদী বা সাগরে ইলিশ উৎপাদনে জেলেদের কোন উৎপাদন খরচ না থাকলেও ধৃত ইলিশের দাম অসাধু ব্যবসায়ী/সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ইলিশ আহরণ ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক ব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ইলিশের মূল্য নির্ধারণ প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ইলিশের মূল্য নির্ধারণের জন্য মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুছ। জেলে, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের ব্যাক্তিবর্গদের নিয়ে দাম নির্ধারণ করা যেতে পারে।
চাঁদপুরে ইলিশ রক্ষায় দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি ইলিশের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ করা সরকারী ভূমিকা এখন সময়ের দাবী।