
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি।।
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধান চাষে ভিন্নতা এনেছে শৌখিন ধান চাষী ও ফার্মাসিস্ট দুলাল সরকার। বেগুনি পাতায় মোড়া ধান আবাদের পর এবারে সবুজের ধান ক্ষেতকে নতুনত্ব জাত ব্রি ১০৮ আবাদ করে তাক লাগিয়ে, এলাকায় সারা ফেলেছে।
এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে স্থানীয়সহ আশ-পাশের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের মাঝে। সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝখানে নতুন জাত, উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল সবুজ পাতার ধান। চোখ ধাঁধানো অপরূপ অধিক ফসলের মাঠ।
উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের ঘিওরকোল মধ্যপাড়ার মৃত তুষ্টু লাল সরকারের বড় ছেলে (ফার্মাসিস্ট) ধান চাষি দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, আমি গত মৌসুমে বেগুনি ধানের আবাদ করেছিলাম। এবারে উপ-সহকারী মনিরুল ইসলামের পরামর্শে এই উন্নত ও পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ব্রি১০৮, নতুন জাতের বীজধান হতে চারা বানিয়ে প্রয়োজনীয় দূরত্বে ১টি করে চারা রোপন করি। বোরো মৌসুমে রোপন করে অন্যান্য জাতের পূর্বেই এই ধান ঘরে তুলতে পারব। এই ধান আবাদে ফলন দেখে বিভিন্ন চাষী আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কৃষি তথ্যমতে জানা যায়, ব্রি ধান ১০৮ জাতটি বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে। এ জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত।
IR ৮০৫৬১০ এবং China inbred ৩২১ এর মধ্যে সংকরায়ণ পদ্ধতিতে বিআরএইচ ১১-৯-১১-৪-৫ বি উদ্ভাবিত হয়। উক্ত কৌলিক সারিটির গবেষণা কার্যক্রম ব্রিতে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়। এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), গাজীপুর এবং ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয় সমূহের গবেষণা মাঠে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে নানা কৃষি পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে এ নতুন কৌলিক সারিটির উপযোগিতা, ফলন ও অন্যান্য কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য সমূহের ব্যাপক ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১ তম সভায় এ কৌলিক সারিটি ব্রি ধান ১০৮ নামে বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়।
ব্রি ধান১০৮ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০২ সেমি, এর ডিগ পাতা খাড়া ও গাঢ় সবুজ, এক সঙ্গে হেলে পড়া সহিষ্ণু এবং জীবনকাল ১৪৯ থেকে ১৫১ দিন। এ জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। ব্রি ধান ১০৮ উচ্চ ফলন ও ফাইন গ্রেইনের সমন্বয় ঘটেছে। এ জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০ টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত এবং গড় ফলন ৮ দশমিক ৭ টন হেক্টর প্রতি।
ব্রি ধান ১০০ জাতের চেয়ে ১ দশমিক ০ থেকে ১ দশমিক ৫ টন বেশি। ব্রি ধান ১০৮ এর ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ১৬ দশমিক ৩ গ্রাম, চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন জিরা চালের অনুরূপ, ভাত ঝরঝরে, রং সাদা এবং আ্যমাইলোজ ও প্রোটিনের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
উপজেলা কৃষি অফিসার এস. এম রাসেদুল হাসান বলেন, সোনালি রঙের ব্রি-১০৮ জাতের ধানটি এই উপজেলায় প্রথম চাষ হয়েছে। এই ধানের চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন। ভাত ঝরঝরে ও সুস্বাদু হওয়ায় উচ্চমূল্যের জিরা ধানের বিকল্প হিসেবে এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
ব্রি-১০৮ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আবিষ্কৃত সর্বাধুনিক জাতের ধান। এটি অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি উৎপাদন হয়। প্রতি গোছায় কুশির সংখ্যা ১৬-১৭। দানার পুষ্টতা শতকরা ৮৮.৬ ভাগ। চালে প্রোটিনের পরিমাণ ৮.৮ শতাংশ, যা অন্যান্য চালের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। উপজেলার অন্য কৃষকদের মধ্যে ধানটি ছড়িয়ে দিতে বীজ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্রি ১০৮ নতুন জাত হওয়ায় এর প্রচার ও চাষ পদ্ধতি ঠিক থাকলেও কৃষকের নিকট ধান বীজ কৃষকের চাহিদা অনুসারে সরবরাহ করার সম্ভব হচ্ছে না।