
নিউজ ডেস্ক
আজ ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করে আসছে। পরিবেশ রক্ষা, দূষণ প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিই এর মূল লক্ষ্য।
এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য— ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’, আর স্লোগান— ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’। এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে প্লাস্টিকজনিত দূষণের ক্ষতি তুলে ধরা এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ঈদুল আজহার সরকারি ছুটির কারণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ২৫ জুন পালন করবে। ওইদিন প্রধান উপদেষ্টা বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা ও পরিবেশ মেলার উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে জাতীয় পরিবেশ পদক ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পদক প্রদান করা হবে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সারা দেশে ৬৪টি পরিবেশ সংগঠন সম্মিলিতভাবে বৃক্ষরোপণ ও প্লাস্টিক দূষণবিরোধী গণপ্রচারণা চালাবে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দেশের প্রতিটি জেলায় একযোগে বৃক্ষরোপণ, মানববন্ধন ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণে অন্তত ১০০টি গাছ রোপণ করা হবে। বিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে এসব গাছ স্থায়ীভাবে রোপণ করা হবে। দরিদ্র পরিবারগুলোকে উপহার দেওয়া হবে কমপক্ষে ১০টি করে গাছ।
এছাড়া জেলা শহরগুলোর জনবহুল এলাকায় প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধন, প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য এবং পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করা হবে। দোকানপাট, বাজার ও রাস্তাঘাটে পথচারীদের মাঝে প্লাস্টিকের ক্ষতি ও বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্যের প্রচার চালানো হবে।
ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “৬৪ জেলায় একযোগে পরিবেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পলিসি ও ক্যাম্পেইন কো-অর্ডিনেটর বারীশ হাসান চৌধুরী বলেন, “পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিতে স্থানীয় পর্যায় থেকেই সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই—প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমরা বদ্ধপরিকর।”
মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি বলেন, “এই কর্মসূচি কেবল গাছ লাগানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতীক—আশা, দায়িত্ব ও স্থায়িত্বের। আমরা চাই, প্রতিটি জেলা হয়ে উঠুক সবুজ বিপ্লবের অংশীদার।” তিনি জানান, ৬৪ জেলার এই আয়োজন হলো সারা দেশে ৪৯৫টি থানায় বছরব্যাপী বৃক্ষরোপণ ও প্লাস্টিকবিরোধী কার্যক্রমের প্রথম ধাপ।
জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৪০ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার অর্ধেকই একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ রিসাইকেল হয়। বাকি প্লাস্টিকের বড় একটি অংশ নদী, সমুদ্র ও মাটিতে জমা হয়, যা মানুষের স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করলেই এই দূষণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।