
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।
আমি এমন কি অপরাধ করলাম, যার জন্য পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদ পর্যন্ত অব্যাহতি দিলেন! জাতীয় পার্টির চেয়াম্যান জিএম কাদেরের প্রতি এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন সদ্য বহিস্কৃত মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। একদিন আগে গত সোমবার তাকে পার্টির মহাসচিব পদসহ দলের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জিএম কাদের।
মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেছেন, আমাকে পার্টির মহাসচিব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কোন আপত্তি নেই। আমার একটাই দুঃখ ৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ১৯৮৭ সালে উপমন্ত্রী হয়েছি, তখন থেকে পার্টির সঙ্গে আছি। আমি যখন মন্ত্রী তখন জিএম কাদের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার। তিনি ১৯৯৬ সালে পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তার কোন যোগ্যতা নেই, তার একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই। তারপরও তাকে নেতা মেনে রাজনীতি করেছি। ২৮ জন নেতাকে প্রমোশন দিয়েছেন, আমি জানি না।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১(ক) ধারার মতো আর কোন রাজনৈতিক দলে ধারা নেই। তাই আমি বললাম এই ধারা পরিবর্তন করা দরকার। এই ধারায় তাকেও (জিএম কাদের) দুই দফায় জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
অন্যদিকে সদ্য বহিস্কৃত সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, আমরা এখনও স্বপদে বহাল রয়েছি, আমাদের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বহাল রয়েছেন। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ। কাউন্সিল ঘোষণার পর কাউকে অব্যাহতি দেওয়া কিংবা প্রমোশন দেওয়া অবৈধ।
তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে আড়াই কোটি টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। সেই টাকার কোন হিসাব দেননি। পার্টির চাঁদা এবং অনুদানের কোন হিসাব দেননি তিনি। আমরা তার কাছে এসবের হিসাব চেয়েছি। এটাতো গঠনতন্ত্র বিরোধী হতে পারে না।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অবিলম্বে কাউন্সিলের মাধ্যমে পার্টির সকল সমস্যা সমাধান করার দাবি জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে।
জাতীয় পার্টি ছোট হতে হতে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে জাতীয় পার্টি আগামী দিনে অনেক ভালো করতে পারবে।
তিনি বলেন, জিএম কাদের একেএকে সবাইকে বের করে দিয়েছেন। আমরা সবাই চাই একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির অনেক সিনিয়র নেতাকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার মতো জাতীয় পার্টি (রওশন) গ্রুপের নেতাদের অনেককে দেখা গেছে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি সম্ভবত রাজনৈতিক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভাঙন কবলিত। এরশাদের জীবদ্দশায় জাপা, জেপি, বিজেপি ও জাপা (জাফর) নামে চার টুকরো হয়ে যায়। এরশাদের মৃত্যুর পর সহধর্মিণী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আরেকটি জাপার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও রওশন গ্রুপের তেমন কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। মাঝে মধ্যে বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ওই গ্রুপটির কার্যক্রম। জাপার গ্রুপগুলোর মধ্যে জেপি (মঞ্জু) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক ছিল। বিজেপি এবং জাপা (জাফর) রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে দলটি। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও চেয়ারম্যানের কার্যালয় একাধিক দফায় হামলার শিকার হয়েছে। একাধিক কর্মসূচি বন্ধ হয়েছে বৈষম্য বিরোধীদের বাঁধায়। নতুন করে আরেকটি দল ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন কেউ কেউ।