
আক্তারুল ইসলাম।
কাল বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতিটি মুসলিমের জীবনে ঈদের দিনটি আনন্দ, মিলন ও ত্যাগের এক মহাসমারোহ। তবে এ আনন্দে ভিন্ন রকমের এক সুর বাজে প্রবাসীদের মনে। তারা হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও মন পড়ে থাকে দেশের মাটিতে, পরিবারের পাশে, ঈদের সেই চিরচেনা ঘ্রাণে।
সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ইউরোপ কিংবা আমেরিকার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদ উপলক্ষে মনভরে দেশে ফিরতে পারেন না সবাই। সীমিত ছুটি, ব্যয়বহুল বিমান টিকিট কিংবা কর্মস্থলের চাপে তারা থাকতে বাধ্য হন প্রবাসের কঠিন বাস্তবতায়।
রাজু হোসেন, একজন নির্মাণ শ্রমিক, বর্তমানে দুবাইয়ে আছেন প্রায় ৫ বছর। তিনি বলেন,
“প্রতিবছর ঈদের সময় এমন এক বুকের ভেতরে হাহাকার জেগে ওঠে, যা ভাষায় বোঝানো যায় না। মা’র হাতে রান্না করা সেমাই, বাবার সঙ্গে ঈদের নামাজ আর ছোট ভাইবোনদের হাসিমুখ – এগুলো এখন শুধু স্মৃতিতে।”
শুধু রাজু নয়, লাখো প্রবাসী এমন বাস্তবতার মধ্য দিয়েই কাটান ঈদ। অনেকেই পরিবারকে ভিডিও কলে দেখে চোখের জল চেপে রাখেন। কিছু প্রবাসী ছোট ছোট আয়োজনে নিজেদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেন। তারা পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়ে তৈরি করেন এক নতুন পরিবার – প্রবাস পরিবার।
তবু সবকিছুর মাঝে আছে এক গভীর ত্যাগ ও প্রেরণা। এরা হচ্ছেন সেই মানুষ, যারা নিজের আরাম ও আনন্দ ত্যাগ করে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে দেশের বাইরে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। ঈদে পরিবারের সাথে না থাকার কষ্ট সহ্য করে তারা যেভাবে নিজের স্বপ্ন আর দায়িত্ব পালন করেন, তা সত্যিই অনুপ্রেরণার।
প্রবাসী রাহাতুল ইসলাম বলেন,
“আমার ছেলে ছোট, ঈদে বাবার কোলে চড়তে চায়। কিন্তু ভিডিও কলে ওর মন ভরে না। তবুও আমি চেষ্টা করছি—আজ না হোক, আগামী ঈদে যেন ছেলের সঙ্গে ঘরে বসে ঈদ করতে পারি। এই চেষ্টাই আমার প্রেরণা।”
বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের জন্য ঈদ মানেই আনন্দ। তবে প্রিয়জন দূরে থাকলে সেই আনন্দে এক চিলতে শূন্যতা লেগে থাকে। তাই আমাদের উচিৎ প্রবাসী প্রিয়জনদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা, তাদের কষ্ট ও ত্যাগকে সম্মান জানানো।
শেষ কথা:
প্রবাসীরা শুধু অর্থ প্রেরণ করেন না, তারা ভালোবাসা, ত্যাগ ও দায়িত্ববোধের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এ ঈদে আসুন, তাদের স্মরণ করি, ফোন করে খোঁজ নিই, হৃদয়ের কাছাকাছি এনে দেই। ঈদ হোক সবার জন্য আনন্দময়—দেশে কিংবা দূরে, হৃদয়ের বন্ধনে আমরা সবাই এক।
ঈদ মোবারাক।