কালুরঘাট ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তে চালক-সহকারীর গাফিলতির প্রমাণ

Spread the love

স্টাফ কসেরপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ঈদুল আজহার দুদিন আগে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় শিশুসহ দুইজন নিহত এবং অন্তত ১৬ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ট্রেনচালক ও সহকারী চালককে দায়ী করা হয়েছে। রেলওয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ট্রেনচালক গোলাম রসুল এবং সহকারী চালক আমিন উল্লাহর বিরুদ্ধে ‘গাফিলতি ও নিয়ম ভঙ্গের’ সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার দিন চালক ও সহকারী চালক ‘ডেড স্টপ’ নামক বাধ্যতামূলক নিয়ম ভেঙে সেতুতে ট্রেন তোলেন। নিয়ম অনুযায়ী, কালুরঘাট সেতুর মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ট্রেন চালানোর আগে গেট কেবিনে ট্রেন থামিয়ে গেটম্যানের কাছ থেকে লিখিত সম্মতি নিতে হয় এবং সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার গতিতে সেতু অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু ওইদিন তারা কোনো অনুমোদন ছাড়াই দ্রুত গতিতে ট্রেন চালিয়ে সেতুতে ওঠেন, ফলে সেতুর ওপর থাকা যানবাহন ট্রেনের নিচে পিষ্ট হয়।

এই ঘটনায় অটোরিকশাচালক তৌহিদুল ইসলাম (২৯) এবং চার বছর বয়সী শিশু মেহেরিমা নূর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আহত হন আরও অন্তত ১৬ জন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চালকরা রেলওয়ের জিআর বিধি ৬, ৮৯ এবং আন্তঃনির্দেশনা ২১২(২) লঙ্ঘন করেছেন।

রেলওয়ের চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, নিয়ম না মেনে সেতুতে ট্রেন তোলার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। চালক ও সহকারী চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশও করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে—সেতুতে ওঠার আগে যানবাহনের নম্বর লিপিবদ্ধ রাখা, গেটম্যানদের জন্য ওয়াকিটকি সরবরাহ, বাড়তি গেট ব্যারিয়ার বসানো, চালকদের জন্য সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনা।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট সেতুর কার্যকারিতা অনেক আগেই শেষ হয়েছে। দেড় বছর আগে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি আংশিক সংস্কার করা হয়। বর্তমানে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চার জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন এবং মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। বুয়েটের পরামর্শে সেখানে ‘ডেড স্টপ’ নিয়ম চালু করা হলেও তা উপেক্ষার কারণেই এই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *