
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
পাকিস্তানে অস্বাভাবিকভাবে তীব্র হয়ে ওঠা এবারের বর্ষায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৮০ জনের এবং আহত হয়েছেন পাঁচশোরও বেশি মানুষ। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) জানিয়েছে, জুলাই মাসের শুরুতেই বর্ষা শুরু হওয়ায় এ পর্যন্ত প্রাণহানির এই চিত্র সামনে এসেছে। খবর ডনের।
গতকাল শনিবার (১৯ জুলাই) পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর (পিএমডি) জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিন্ধু প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। করাচি, হায়দরাবাদসহ অনেক এলাকাই ঝুঁকিতে রয়েছে।
এনডিএমএ’র ন্যাশনাল ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) নিম্নাঞ্চলে শহুরে বন্যার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, নাগরিকদের ঘন বর্ষণের সময় ঘরে থাকার, দুর্বল এলাকায় যাত্রা এড়াতে এবং বাসার ড্রেনেজ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাঞ্জাবের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) আজ রোববার (২০ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া বর্ষার চতুর্থ ধাপের জন্য পূর্বাভাস দিয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এমন অবস্থা। এই সময়টিতে পাঞ্জাবের অধিকাংশ জেলায় প্রবল হাওয়া, ধুলিঝড় ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পিডিএমএ।
এদিকে, ফ্লাড ফরকাস্টিং ডিভিশন জানিয়েছে, চেনাব, ঝেলম, রাভি, শতলজ ও সিন্ধু নদ এবং এদের উপনদীতে পানির প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলে বড় ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলে বর্ষা ও হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে কাবুল, সোয়াত, পাঞ্জকোড়া, বারা এবং কালপানি নদীতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে এনডিএমএ।
ইসলামাবাদ ও মধ্য পাঞ্জাবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। পূর্বাভাসে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে রাওয়াল ড্যামে পানির স্তর ১ হাজার ৭৪৮ ফুটে পৌঁছেছে। রোববার সকাল ৬টা থেকে স্পিলওয়ে খুলে দেওয়া হয়েছে পানি কমিয়ে ১ হাজার ৭৪৬ ফুটে নামিয়ে আনতে। ড্যামের আশপাশের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
পাঞ্জাবে ২৫ জুন থেকে এখন পর্যন্ত রেসকিউ ১১২২ বাহিনী ১ হাজার ৫৯৪ জনকে উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে ১১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই ভবনধসের কারণে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে লাহোরে (২৭ জন), এরপর ফয়সালাবাদ (১৫), শেখুপুড়া (১১), রাওয়ালপিন্ডি (১০)।
অ্যাটক জেলায় বৃষ্টিজনিত ঘটনায় শনিবার প্রাণ হারিয়েছে ৩ শিশু—একজন পানিতে ডুবে, একজন বাড়ির ছাদ ধসে এবং আরেকজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শনিবার চাকওয়াল সফরে গিয়ে মৃতদের পরিবারকে ৫০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বন্যাকবলিত এলাকায় রাস্তা সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। রাওয়ালপিন্ডির ক্রাউলি ধোক ব্রিজসহ একাধিক রাস্তা পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এনডিএমএ চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইনাম হায়দার মালিক জানিয়েছেন, এবারের বর্ষা মৌসুম স্বাভাবিকের চেয়ে এক মাস আগে শুরু হয়েছে এবং আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই তীব্র বর্ষণের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন ও হিমবাহ গলে যাওয়াকেই দায়ী করছেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং সশস্ত্র বাহিনী, পিডিএমএ ও এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতায় দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।