
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,জনতারকথা, ঢাকা।
রংপুরের এলপি গ্যাস ফিলিং স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। বিস্ফোরণের পর যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এলপিজি ফিলিং স্টেশনের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্নই সামনে আসছে সেটি হচ্ছে নিম্নমানের ট্যাংকের বিষয়টি।
শনিবার (১৯ জুলাই) রংপুরে ভয়াবহওই বিস্ফোরণে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
আশপাশে রাখা অন্তত ২০টি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ও মহাসড়কে চলাচলকারী দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের কম্পনে আশপাশের ভবনের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।
ওই ঘটনার জন্য বিস্ফোরক অধিদফতরের অবহেলার পাশাপাশি ফিলিং স্টেশনের মালিক আরিফুজ্জামান ও ট্যাংক নির্মাতা ঠিকাদারের মুনাফালোভী মনোভাব সামনে চলে এসেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিম্নমানের ট্যাংক সরবরাহ করাকে দায়ী করেছেন অনেকেই।
অটোগ্যাস ফিলিং স্টেশন মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল মওলা বার্তা২৪.কমকে বলেন, রংপুরে দুর্ঘটনার পর জোনাল কমিটিকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তারা বলেছে, ট্যাংকটি প্রেসার টেস্ট করার সময় বিস্ফোরিত হয়েছে। সেখানে ২-৩ (বার) পিএসআই চাপ দিতেই বিস্ফোরণ হয়েছে। ট্যাংকটির কোয়ালিটি ঠিক ছিলনা। বিদেশি বলে দেশীয় ট্যাংক গছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রংপুরের ওই ট্যাংকটি স্থাপন করেছেন ড্রিম এলপিজি বিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ১০ টন ধারণ ক্ষমতার ওই ট্যাংকটি কোয়ালিটি নিয়ে তোলা অভিযোগ সত্য নয়। ট্যাংকটি তুর্কিয়ের এএইচএস মেকিনা নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা।
দেড় বছরের মাথায় বিস্ফোরণ এবং একজনের মৃত্যূ নিয়ে তাকে দায়ি করা হচ্ছে। বিদেশি বলে দেশীয় ট্যাংক গছিয়ে দেওয়া দায় এড়াতে পারেন কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার ব্যবসার প্রতিদ্বন্দ্বিরা এটা ছড়াতে পারেন। আমরা কোয়ালিটি ট্যাংক বসিয়েছি সেখানে। যতদূর শুনেছি সাকসেশন পাইপ ওপর থেকে সরিয়ে নিচে নেওয়ার সময় ওই বিস্ফোরণ হয়েছে।
সেলিম আহমেদ বলেন, আমরা স্থাপন করেছি কোন সমস্যা হলে আমাদেরকে জানানো কথা। কিন্তু তারা নিজেরা কাজ করতে গেছে। ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন স্মেট সার্ভিসেসের সাবেক ব্র্যাঞ্চ ইঞ্জিনিয়ার সোহাগ মাহমুদ। তার দুই কানের পর্দা ফেটে গেছে। সোহাগ মাহমুদ যিনি টেকনিশিয়ান হিসেবে ফিলিং স্টেশনটির কাজ করতে গিয়েছিলেন বলে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ট্যাংকি নিম্নমানের হাওয়ার কারনে এই দুর্ঘটনা টা ঘটেছে।
আমাদের কাজ সব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মাত্র প্রেসার ২ বার দিয়ে ট্যাংকি চেক করা হয়েছিলে কিন্তু নরমালি আমরা সব ট্যাংকিতে ৮-১০ বার হাওয়া উঠায় কিন্তু এখানে সব কাজ শেষ করে সব পাইপ লাইন চেক দেওয়ার ১ঘণ্টা পর এই ঘটনা টা ঘটে। এটার একটাই কারণ ট্যাংকিতে যে মেকানিজম ব্যাবহার করা হয়েছে বা যে মোটেরিয়াল ব্যাবহার হয় তা নিম্ন মানের যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এলপিজি ট্যাংক দেশের বাহির থেকে আইএসও স্ট্যান্ডার্ড এবং অন্যান্য সেফটি প্যারামিটার অনুসরণ করে তৈরি হয়ে থাকে। কিন্তু ইদানিং একটি অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অধিক মুনাফার আশায় বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে এগুলো তৈরি করছে যা কিনা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং বিস্ফোরক অধিদফতরের নিয়মবহির্ভূত এবং অনুমতি বিহীন। বিস্ফোরক অধিদফতর সবকিছু দেখার পর নিবর দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
রংপুরের বিস্ফোরণ এলপিজি স্টেশন সম্পর্কে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, যা ওই শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। অবৈধভাবে এলপিজি ট্যাঙ্ক উৎপাদন বন্ধ, বিস্ফোরক অধিদফতরের কঠোর তদারকি ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। ফিলিং স্টেশনগুলোতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা। একই সঙ্গে স্টেশন মালিক আরিফুজ্জামান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রিম এলপিজি বিডির মালিককে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এক সময় সিএনজি ফিলিং স্টেশনকে ব্যাপক প্রণোদনা দেওয়া হয়। এতে করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েক সিটিতে দ্রুত প্রসার লাভ করে সিএনজি চালিত যানবহন। কিন্তু গ্যাস ঘাটতির কারণে নতুন করে সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং আবাসিকে গ্যাস সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রিয় হতে থাকা সিএনজির সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে এলপিজি। সারাদেশে প্রায় ৪ হাজারের ওপর এলপি গ্যাস ফিলিং স্টেশন হয়েছে। দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলগুলোতে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলপিজি। আর সেই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে কিছু সংখ্যক মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে নিকট ভবিষ্যতে রংপুরের মতো আরও অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনার শঙ্কা করা হচ্ছে।