
স্পোর্টস ডেস্ক:
ক্রিকেট ইতিহাসে এক বার বার ফিরে আসা শব্দ- ‘চোকার্স’। আর তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এক দল— দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় মঞ্চে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছে তারা। কিন্তু এবার, সেই গল্পটা বদলাতে চলেছে। লর্ডসের সবুজ গালিচায়, ক্রিকেটের মক্কায়, তারা একেবারে পৌঁছে গেছে ইতিহাসের দোরগোড়ায়।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শুক্রবার তৃতীয় দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ২১৩/২। জয়ের জন্য প্রয়োজন আর মাত্র ৬৯ রান। হাতে রয়েছে আটটি উইকেট, সময় দু’দিন। পরিসংখ্যান বলছে, এখন আর কেবল অঘটনই থামাতে পারে প্রোটিয়াদের।
এই জয়ের পিছনে রয়েছে এডেন মার্করাম ও অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা। একদিকে বাভুমা যিনি হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়েও ব্যাট ছাড়েননি, অন্যদিকে শতরান করে স্টেডিয়াম মাতালেন মার্করাম। হেজলউডকে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে শতরান ছুঁতেই গ্যালারিতে গর্জন ওঠে। উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেন কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স পর্যন্ত। মাঠে ছিল শুধুই দক্ষিণ আফ্রিকার জয়গান।
অথচ দিনের শুরুটা এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। ১৪৪/৮ অবস্থায় থাকা অস্ট্রেলিয়াকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও শেষ উইকেটে স্টার্ক ও হেজলউড মিলে ৫৯ রান যোগ করে ম্যাচে খানিকটা উত্তেজনা ফেরান। সেই জুটি ভাঙেন মার্করাম নিজেই, বল হাতে নিয়েও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন তিনি।
কিন্তু এরপর যে ব্যাটিং প্রদর্শন, তা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে বহুদিন মনে রাখার মতো। প্রথম ইনিংসে যেখানে তারা মাত্র ১৩৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল, সেই দলটাই ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়াল। স্টার্ক, হেজলউড, কামিন্স— কেউই ম্যাচে ফারাক গড়ে দিতে পারলেন না। বরং বাভুমা ও মার্করাম মিলে গড়ে তুললেন এক অনন্য জুটি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এই ম্যাচ কেবল আর একটি ফাইনাল নয়। এটা শতাব্দীর প্রতীক্ষার শেষ অধ্যায়। দু’টি একদিনের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ছাড়া আইসিসির কোনও বড় টুর্নামেন্টে ট্রফি জয়ের স্বাদ পায়নি তারা। এবার যদি শেষ মুহূর্তে ছিটকে না যায়, তবে লর্ডসে উঠবে দক্ষিণ আফ্রিকার পতাকা। আর ‘চোকার্স’ তকমাটি হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়!